সোমবার, ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ - (English Version)

সাপের কামড়ে দুই ছেলেকে হারালেন সাপুড়ে আলম হোসেন

সাপের কামড়ে দুই ছেলেকে হারালেন সাপুড়ে আলম হোসেন

আজহার ইমাম ও আবু বকর : সাপের খোঁজ পেলেই সব কাজ ফেলে সেখানে ছুটে যেতেন সাপুড়ে আলম হোসেন। ১২ বয়স থেকেই দক্ষ হাতে বিষধর সাপকে মুহ‚র্তেই বশীভ‚ত করতেন তিনি। তাঁর এই দক্ষতা দেখে সেই কৌশল শিখে ফেলছিলেন তার দুই ছেলে ওবায়দুর রহমান ও শাকিল হোসেন। কে জানত ৬২ বয়সে এসে আলম হোসেনকে ছেলেকে সাপের ছোবলেই প্রাণ হারানোর ব্যথা বইতে হবে । পাঁচ বছর আগে আলমের বড় ছেলে ওবায়দুর রহমানের সাপের কামড়ে মৃত্যু হয়। সেই ব্যথা বুকে ধারণ করে চলতে চলতেই গত বৃহস্পতিবার, আবারও সাপের কামড়ে মারা গেলেন ছোট ছেলে শাকিল হোসেন (১৮)। নদীর পাড়ে একটি গোখরো সাপ ধরতে গিয়ে অসাবধানতাবশত সাপটি শাকিলের বাঁ হাতে কামড় দেয়। এতে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। স্থানীয়রা তাঁকে দ্রæত দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে, চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

দুই ছেলের মৃত্যুর পর শোকস্তব্ধ আলম হোসেন পাগলের মতো হয়ে গেছেন। এবার তিনি প্রতিজ্ঞা করেছেন, আর কখনো সাপ ধরবেন না। জানা গেছে আলম হোসেনের বাড়ি দিনাজপুরের বিরামপুর পৌর শহরের প‚র্ব জগন্নাথপুর হঠাৎপাড়া মহল্লায়। তার আদি নিবাস ছিল গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কামদিয়া গ্রামে।

আলম হোসেনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, শাকিলের মরদেহ গোসল করাচ্ছেন স্বজনেরা। পাশে নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন আলম হোসেন, যিনি পাঁচ বছরের ব্যবধানে দুই ছেলেকে হারিয়ে শোকে ভেঙে পড়েছেন। প্রতিবেশীদের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা যায় তাঁকে। তিনি বিলাপ করে বলছেন, “সাপ ধরতে গিয়ে আমার দুই ছেলে মারা গেল। আমি এখন কী নিয়ে বাঁচব? আমি প্রতিজ্ঞা করছি, আর কখনো সাপ ধরব না। আমার পরিবারের আর কাউকে হারাতে চাই না। জীবনে আর কোনো সাপখেলা দেখাব না।”

নিহত শাকিল বিরামপুর পৌর শহরের একটি স্যানিটারি কারখানায় সিমেন্টের রিং ও স্ল্যাব তৈরির কাজ করতেন। কাজের ফাঁকে শখের বসে তিনি বিভিন্ন জায়গায় সাপ ধরে বেড়াতেন। আলম হোসেন বাড়িতে সাপ ধরে এনে পোষ মানাতেন, এরপর স্ত্রীকে নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় সাপখেলা দেখিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। কয়েক বছর ধরে শাকিলও বাবার সঙ্গে সাপ ধরার কাজে যুক্ত ছিলেন এবং সেই সাপগুলো স্থানীয় সাপুড়েদের কাছে বিক্রি করতেন।

সাপুড়ে আলমের প্রতিবেশী অটো রাইস মিলের মালিক রুবেল জানান, “ঘটনাস্থল থেকে শাকিলকে বিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাই। সেখানকার জরুরি বিভাগের চিকিৎসক জানান, শাকিলের শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমে ২০ শতাংশে নেমে এসেছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়, কিন্তু সেখানে সন্ধ্যার দিকে তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়।”

Share This