শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ - (English Version)

সাবেক এমপি শিবলি সাদিকসহ ৬৪জনের বিরুদ্ধে আরও একটি হত্যা মামলা

সাবেক এমপি শিবলি সাদিকসহ ৬৪জনের বিরুদ্ধে আরও একটি হত্যা মামলা

আজহার ইমাম ও আবু বকর সিদ্দিক, বিরামপুর প্রতিনিধি: দিনাজপুর-৬ আসনের সাবেক এমপি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শিবলী সাদিকের নামে আরও একটি হত্যা মামলা হয়েছে। এ নিয়ে নবাবগঞ্জ ও হাকিমপুর থানায় দুটি হত্যা মামলার দায়ের করা হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।

গত সোমবার দিনাজপুর জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলার উত্তর শ্যামপুর গ্রামের মৃত আব্দুস সামাদের ছেলে ভ্যান চালক রবিউল ইসলাম সাবেক এমপি শিবলি সাদিক সহ আওয়ামী লীগের ৬৪ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা মামলা দায়ের করেছেন। বাদী নিজের ছেলে ও ছেলের দুই বন্ধুকে হত্যার অভিযোগে এ মামলা দায়ের করেছেন বলে জানিয়েছেন নবাবগঞ্জ থানার ওসি তাওহীদুল ইসলাম ।

এর আগে ১৯ আগস্ট হাকিমপুর থানায় ৫ আগস্টে, হাকিমপুর পৌর শহরে সাবেক পৌর মেয়র জামিল হোসেনের বাড়িতে দুই যুবককে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগে নিহতের বড় ভাই সুজন বাদী হয়ে সাবেক এমপি শিবলী সাদিকসহ ১২৩জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছিলেন।

নবাবগঞ্জ থানার মামলা সূত্রে জানা গেছে, তিন যুবককে হত্যা মামলার আসামিরা হলেন. দিনাজপুর-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শিবলী সাদিক,তার ছোট ভাই সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তাজওয়ার মোহাম্মদ ফাহিম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান (মানিক), যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সায়েম সবুজ, দপ্তর সম্পাদক মো. শামসুজ্জামান, আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আতাউর রহমান, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শাহিনুর রহমান, উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম হোসেন ও ছাত্রলীগ নেতা জামাল বাদশা সহ আরও অজ্ঞাত ৬৪ জন।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২২ সালের মার্চ মাসে নবাবগঞ্জ উপজেলার ২ নম্বর বিনোদনগর ইউনিয়নে কাঁচদহ সেতুর উত্তর দিকে প্রায় ২০০ গজ দূরে করতোয়া নদীতে ১ নম্বর আসামি সাবেক এমপি শিবলী সাদিকের প্রভাব খাটিয়ে ইজারা নেওয়া একটি বালুমহাল ছিল। সে সময় ওই বালুমহালের দায়িত্বে শিবলী সাদিকের অধীন মামলার আসামিদের অনেকে ছিলেন। বাদী রবিউল ইসলামের বড় ছেলে রিমন ইসলাম (২২) ওই বালুমহালে বালু তোলার ট্রাক্টরের হিসাব রাখার কাজ করতেন। আর সেখানে শ্রমিকের কাজ করতেন রিমন ইসলামের বন্ধু কিবরিয়া ইসলাম (৩০) ও সাব্বির রহমান (২৩)। তাঁরা তিনজনই ওই বালুমহালের ঘরে থাকতেন। বালু বিক্রির ট্রাক্টরের হিসাব নিয়ে রিমন ইসলাম ও তাঁর দুই বন্ধু কিবরিয়া ইসলাম ও সাব্বির রহমানের সঙ্গে মামলার ২ নম্বর আসামি শাহিনুর রহমান (সবুজের) বাগ্বিত-া হয়। এ সময় শাহিনুর ইসলাম ৩ জনকে বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি ও হুমকি দেন। পরে ৩০ মার্চ বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে রিমন, কিবরিয়া ও সাব্বির কাঁচদহ বালুমহাল থেকে একটি মোটরসাইকেলে নবাবগঞ্জ বান্নি মেলায় ঘুরতে যায়। মেলা শেষে রাতে ওই তিনজন বান্নি মেলা থেকে কাঁচদহ বালুমহালের উদ্দেশে মোটরসাইকেলে রওনা দেন। রাত সোয়া ১২টার দিকে তাঁরা উপজেলার বিনোদনগর ইউনিয়নে নবাবগঞ্জ-কাঁচদহ পাকা সড়কে কৃষ্ণপুর এলাকায় পৌঁছলে শাহিনুর রহমানের নেতৃত্বে আসামি জিয়াউর রহমান, তাজওয়ার ফাহিম, আজিজুল হক, জামিনুর রহমান, সায়েম সবুজ, শামসুজ্জামান, সানোয়ার হোসেন ম-ল ও সাদেক আলী তাঁদের মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে কুড়াল দিয়ে রিমনের মাথায় কোপ দেন। এ সময় কিবরিয়া চিৎকার দিলে ৩ নম্বর আসামি জিয়াউর রহমান হাঁসুয়া দিয়ে কিবরিয়ার গলা ও বুকে কয়েকটি কোপ দেন। একপর্যায়ে মামলার আসামি তাজওয়ার ফাহিম, আজিজুল হক, জামিনুর রহমান, সায়েম সবুজ, শামসুজ্জামান, সানোয়ার হোসেন ম-ল ও সাদেক আলী হাঁসুয়া, কুড়াল ও লোহার রড দিয়ে সাব্বির রহমানের মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে হত্য করে তাঁদের লাশ রাস্তার পাশে ফেলে চলে যান।

ঘটনার পর স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে নিহতের পরিবার ওই তিনজনের লাশ শনাক্ত করেন। ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা ক্ষমতাসীন দলের হওয়ায় ওই সময় নিহতদের পরিবারের সদস্যরা মামলা করার সাহস পাননি। সাবেক এমপি শিবলী সাদিকের পরিকল্পনায় আসামিরা ওই ৩ জনকে হত্যা করে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে নবাবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাওহীদুল ইসলাম বলেন, তিনজনকে হত্যার অভিযোগে রবিউল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি স্থানীয় সাবেক সংসদ সদস্য শিবলী সাদিক, সাবেক দুই উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের ৬৪ নেতার নাম উল্লেখ করে মামলা করেছেন। তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানান । এদিকে নিহত তিনজনের পরিবারের অভিযোগে আরো জানা যায়

মামলার বাদী রবিউল ইসলাম জানান, ঘটনাটিকে আসামীদের যোগসাজশে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত বলে চালিয়ে দেন নবাবগঞ্জ থানার তৎকালীন ওসি ফেরদৌস ওয়াহিদ। এ ছাড়া সাবেক এমপি শিবলী সাদিকের নির্দেশে নিহত ৩ জনের মরদেহ ময়না তদন্ত ছাড়াই তড়িঘড়ি করে দাফনের জন্য তাঁদের পরিবারকে চাপ দেওয়া হয়েছিল।

Share This