আজহার ইমাম ও আবু বকর সিদ্দিক : দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলায় ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দোকানিদের কাছ থেকে সরকারি গ্রোথ সেন্টারে দোকান বরাদ্দের নামে প্রায় কোটি টাকা ঘুষ নেওয়ার লিখিত অভিযোগ করেছেন দোকানিরা।
গতকাল মঙ্গলবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে উপজেলার ২ নম্বর কাটলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের কাটলা ইউনিয়ন শাখার সাধারণ সম্পাদক ইউনুছ আলী ম-লের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা নুজহাত তাসনীম আওন ।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অর্থায়নে ‘গ্রামীণ হাটবাজার উন্নয়ন প্রকল্পে’র আওতায় ২০২৪ সালের এপ্রিলে ২ কোটি ৬৯ লাখ ৯ হাজার ৮০০ টাকা ব্যয়ে কাটলা বাজারে গ্রোথ সেন্টারের ওই ভবন নির্মাণ করা হয়। গ্রোথ সেন্টারের নিচতলায় ৫টি শেডে ৩৮টি উন্মুক্ত দোকান ও দ্বিতীয় তলায় ২৪টি দোকানঘর রয়েছে। স্থানীয় ইউনিয়ন হাটবাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির মাধ্যমে গ্রোথ সেন্টারের দোকানগুলো স্থানীয় খুচরা ব্যবসায়ীদের জন্য বরাদ্দ দেওয়ার কথা ছিল। ওই জায়গায় গ্রোথ সেন্টার নির্মাণের পূর্বে স্থানীয় ৫৪ জন খুচরা ব্যবসায়ীর শাকসবজি, মুদিদোকানসহ বিভিন্ন দোকান ছিল। তাঁদের অগ্রাধিকারভিত্তিক দোকান বরাদ্দ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গ্রোথ সেন্টারের ভবনটি নির্মাণের পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ইউনুছ আলী ম-লের কাছে হস্তান্তর করেন।
চেয়ারম্যান গ্রোথ সেন্টারের নিচতলায় বিভিন্ন শেডে দোকান বরাদ্দের জন্য ৩৮ দোকানদারের কাছ থেকে অবৈধভাবে দোকানপ্রতি দেড় থেকে ৩ লাখ টাকা নেন। এ ছাড়া গ্রোথ সেন্টারের দ্বিতীয় তলায় নির্মিত ২৪টি দোকান বরাদ্দ দিতেও তিনি বিভিন্ন অঙ্কের টাকা নেন। চেয়ারম্যান নিজে ও তাঁর আস্থাভাজন কামরুজ্জামান ও সোহেল রানার মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে এভাবে দোকান বরাদ্দের নামে কোটি টাকার বেশি ঘুষ নিয়েছেন। সে ক্ষেত্রে গ্রোথ সেন্টার নির্মাণের আগে সেখানকার দোকানদারদের মধ্যে যাঁরা নতুন শেডে দোকান বরাদ্দ নিতে ইউপি চেয়ারম্যানকে মোটা অঙ্কের ঘুষ দিতে পারেননি, তাঁদের ওই গ্রোথ সেন্টারে দোকান বরাদ্দ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। অভিযোগপত্রে ব্যবসায়ীরা তাঁদের কাছ থেকে চেয়ারম্যানের অন্যায়ভাবে নেওয়া টাকাগুলো ফেরত চাওয়াসহ চেয়ারম্যান ও তাঁর সহযোগীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
জানা গেছে, দোকানঘর বরাদ্দের নামে ইউনুছ আলী ম-ল দোকানদারদের কাছ থেকে দোকানের অবস্থান ও গুরুত্ব অনুযায়ী দোকানপ্রতি সর্বনিম্ন ৪০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৩ লাখ টাকা নিয়েছেন।
গ্রোথ সেন্টারে দোকান না পাওয়া স্থানীয় ব্যবসায়ী প্রদীপ চন্দ্র বলেন, ‘গ্রোথ সেন্টারের নির্মাণকাজ চলাকালে ইউপি চেয়ারম্যান নতুন মার্কেটে দোকান দিতে চেয়েছিলেন। তখন আমি ও আমার বড় ভাই ধারদেনা করে দুজনে ৩ লাখ টাকা করে ৬ লাখ টাকা দিয়েছি। পরে আর সেখানে আমাদের দোকান দেননি। গ্রোথ সেন্টারে দোকান বসাতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান তাঁদের দলীয় লোকজন দিয়ে দোকান বসাতে বাধা দেন। আমি ছোট ব্যবসায়ী ও গরিব মানুষ। সুষ্ঠু তদন্ত করে চেয়ারম্যানের কাছ থেকে আমার টাকা ফেরতের ব্যবস্থা করে দিন।’
এ বিষয়ে কাটলা হাটবাজার বণিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক সামসুল মিয়া বলেন, বাজারে সরকারিভাবে গ্রোথ সেন্টার নির্মাণের আগে দোকানদারেরা যে জায়গায় ছিলেন, তাঁদের সেই জায়গায় দোকান বরাদ্দের কথা ছিল। কিন্তু গ্রোথ সেন্টার নির্মাণের পর মার্কেট উদ্বোধনের আগেই চেয়ারম্যান বিভিন্ন দোকানদারের কাছে অবৈধভাবে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে ইচ্ছেমতো জায়গায় দোকান বরাদ্দ দিয়েছেন। ফলে যাঁরা চেয়ারম্যানকে টাকা দিতে পারেননি, তাঁদের দোকান বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। এতে অনেক দোকানদার আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত দোকানদারদের মধ্যে আজ ২৭ জন ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। অন্যরা কাল–পরশু অভিযোগ করবেন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান ইউনুছ আলী ম-লের বক্তব্য নেওয়ার জন্য তাঁর মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
বিরামপুর উপজেলার ইউএনও ও উপজেলা হাটবাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি নুজহাত তাসনীম বলেন, কাটলা বাজারের সরকারি গ্রোথ সেন্টারে দোকান বরাদ্দের নামে মোটা অঙ্কের টাকা নেওয়ার বিষয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ইউনুছ আলী ম-লের বিরুদ্ধে ২৭ জন ব্যবসায়ী লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর গ্রোথ সেন্টার বন্দোবস্ত নীতিমালা অনুযায়ী ব্যবসায়ীদের মধ্যে দোকান বরাদ্দ নিশ্চিত করা হবে।