তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলার পুনরায় তদন্ত চায় রাষ্ট্রপক্ষ
ঢাকা অফিসঃ
[২] রোববার ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এ এম জুলফিকার হায়াতের আদালতে ‘প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে ‘জাতির পিতা’ ঘোষণা দেয়ার অভিযোগে’ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের হওয়া মামলায় ডিবি’র দেয়া অভিযোগপত্র গ্রহণ শুনানির জন্য দিন ধার্য ছিল।
[৩] এদিন সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী নজরুল ইসলাম শামীম মামলাটি পুনরায় তদন্তের আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক আগামী ২২ সেপ্টেম্বর এ বিষয়ে আদেশের জন্য তারিখ ধার্য করেন।
[৪] এর আগে ০২ ডিসেম্বর, ২০২৩ইং মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের (সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম) উপ-পরিদর্শক হাসানুজ্জামান ২০১৮ সালের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২১/২৫/২৯/৩১ ধারায় অপরাধ প্রাথমিকভাবে সত্য প্রমাণিত হয়েছে মর্মে সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করেন।[৫.১] মামলার সম্পূরক চার্জশিটে তদন্ত কর্মকর্তা উল্লেখ করেন,২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ মামলার বাদী ও তার বন্ধুরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্বরে বসে মোবাইল ফোনে ইউটিউবে ভিডিও দেখছিলেন। এসময় ‘জিয়াউর রহমানকে জাতির পিতা ঘোষণা দিলেন তারেক রহমান’ শিরোনামে একটি ভিডিও তাদের নজরে আসে।
[৫.২] ভিডিওতে দেখা যায়, বিএনপির ৪১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে লন্ডনে আয়োজিত এক কর্মীসভায় দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তার বক্তব্যের একপর্যায়ে বলেন, তাহলে নেত্রীবৃন্দ, আজ এই সভায় যারা উপস্থিত আছেন, আজ এই সভায় ক্যামেরার মাধ্যমে, প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে কি আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারি? আমাদের নেতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের জাতির পিতা।
[৫.৩] আমাদের নেতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান শুধু বাঙালি জাতি না, বাঙালিসহ ৫৫ হাজার ১২৬ বর্গমাইলের মধ্যে যতগুলো জাতি বাস করে- যারা বাংলাদেশি জাতির পরিচয় বহন করে, যারা নিজেদের বাংলাদেশি হিসেবে পরিচয় দেয়, সেই বৃহৎ জনগোষ্ঠীর জাতির পিতা, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের জাতির পিতা।
[৫.৪] আমরা কি আজ সবাই মিলে এই প্রস্তাব গ্রহণ করতে পারি? তাহলে আজকে থেকে সিদ্ধান্ত হলো, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের জাতির পিতা।
[৬] চার্জশিটে আরও উল্লেখ করা হয়, ওই কর্মীসভায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বাংলাদেশের চলমান স্থিতিশীল পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করার উদ্দেশ্যে এমন মনগড়া মিথ্যা তথ্য সম্বলিত উদ্ভট যুক্তি দেন। তিনি জাতিকে নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করে ইতিহাস বিকৃতির চেষ্টা করেছেন। তার ইচ্ছাকৃত ইতিহাস বিকৃতির এই বক্তব্য জনমতে বিভ্রান্তি সৃষ্টির মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলার অবনতির উদ্দেশ্যে দেয়া।
[৭] আসামি তারেক রহমান তার আলোচনায় মনগড়া ভিত্তিহীন আক্রমণাত্মক তথ্য দিয়ে বাংলাদেশের বাঙালি জাতির পিতাকে নিয়ে অপপ্রচার চালিয়েছেন। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২১/২৫/২৯/৩১ ধারায় অপরাধ প্রাথমিকভাবে সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে।
[৮] মামলার সম্পূরক চার্জশিটে তদন্তকারী কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, বিতর্কিত ভিডিও প্রচারকারী চ্যানেল সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের জন্য ৩০ মার্চ, ২০২৩ইং গুগলে ই-মেইল করলে গুগল কর্তৃপক্ষ বিতর্কিত ভিডিও প্রচারকারী চ্যানেল সম্পর্কে কোন তথ্য না দেয়ায় ভিডিও প্রচারকারীর নাম ঠিকানা জানা সম্ভব হয়নি বিধায় তাকে গ্রেপ্তার করাও সম্ভব হয়নি। ভবিষ্যতে তথ্য পাওয়া গেলে কিংবা গ্রেপ্তার হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেই সাথে তারেক রহমানকে পলাতক দেখিয়ে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তার ও ক্রোকি পরোয়ানা জারির আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।
[৯] ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ইং প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে ‘বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের জাতির পিতা’ ঘোষণা দেয়ার অভিযোগে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হল শাখা ছাত্রলীগের উপ-ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে আসামি করে রাজধানীর শাহবাগ থানায় এ মামলা দায়ের করেন।