সোমবার, ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ - (English Version)

৫ দিনে পোশাকশিল্পে ক্ষতি ৮ হাজার কোটি টাকা

ঢাকা অফিসঃ

[২] কারফিউ পরিস্থিতি শিথিলের পর বুধবার থেকে উৎপাদন শুরু হয়েছে দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান উৎস গার্মেন্টস শিল্পে। তবে কারখানা চালু হলেও বিপুল ক্ষতির শিকার হয়েছে এই শিল্প। পোশাকখাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা হিসেবে সহিংস আন্দোলনের পাঁচদিনেই আট হাজার কোটি টাকার ক্ষতির শিকার হয়েছে এই শিল্প। কাঁচামাল সংকট ও কার্যাদেশ অনুযায়ী ক্রেতাদের কাছে পণ্য না পৌঁছানোয় এই ক্ষতি হয়েছে। (বিজিএমইএ ২৭-০৭-২০২৪)

[৩] শিক্ষার্থীদের কোটাবিরোধী আন্দোলনের ওপর ভর করে ১৮ জুলাই থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত নাশকতাকারীদের তাণ্ডবে অস্থির হয়ে ওঠে সারা দেশ। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব ও কোস্টগার্ডের পর মাঠে নামানো হয় সেনাবাহিনী। জারি করা হয় কারফিউ। বন্ধ করে দেয়া হয় ইন্টারনেট সংযোগ এবং ২৩ জুলাই পর্যন্ত ঘোষণা করা হয় সাধারণ ছুটি। কারফিউ শিথিল করার পর ২৪ জুলাই থেকে সকল গার্মেন্টস কারখানা খুললেও বিরাট ক্ষতি হয়ে যায় এই শিল্পের।

[৪] গার্মেন্টস মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ জানিয়েছে, উৎপাদন বন্ধের পাশাপাশি ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় বায়ারদের (ক্রেতা) সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের কাছে সংকটের কথা তুলে ধরা সম্ভব হয়নি। সেই সঙ্গে যান চলাচল বন্ধ থাকায় কার্যাদেশ অনুযায়ী পণ্য পাঠানো যায়নি। রাস্তায় গাড়ি আটকা পড়ায় পণ্য জাহাজীকরণ (শিপমেন্ট) করা যায়নি। অন্যদিকে জাহাজে আসা কাঁচামাল খালাস করাও বন্ধ ছিলো।(রাইজিংবিডি ২৭-০৭-২০২৪)

[৫] বিজিএমইএ পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, আর্থিক ক্ষতির সঙ্গে ওয়ার্ক অর্ডার বাতিলের ভর্তুকি ফি, লেট শিপমেন্ট ফি যুক্ত হবে। শেষ পর্যন্ত এই ক্ষতি টাকার অঙ্কে কতোতে গিয়ে দাঁড়ায় তা এখনই বলা মুশকিল। তিনি বলেন, ইন্টানেট বন্ধ থাকায় ক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। এমনকি আমাদের এখানকার সমস্যা সম্পর্কেও তাদেরকে অবহিত করা যায়নি।

[৬] পোশাকশিল্পের ক্ষতি সম্পর্কে বিজিএমইএ সভাপতি এস এম মান্নান কচি বলেন, কারখানা বন্ধ থাকাকালে প্রতিদিনের আর্থিক ক্ষতি ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকার। কিন্তু এর চেয়েও বড় ক্ষতি হয়েছে আমাদের প্রতি আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের আস্থা ও নির্ভরতায়। বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের ভাবমূর্তির অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে।

[৭] এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী বলেন, কারখানা চালু হলেও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ক্রেতাদের কাছে পণ্য পৌঁছানো কঠিন হবে। বন্দরে আটকে থাকা কাঁচামাল দ্রুত খালাস করতে হবে। কারখানাগুলোতে কাঁচামালের সংকট বিরাজ করছে। অনেকের কাঁচামাল দ্রুত শেষ হয়ে যাবে। অন্যদিকে পণ্যবোঝাই শত শত ট্রাক বন্দর এলাকায় আটকা পড়ে আছে। দ্রুত এসব পণ্য শিপমেন্ট করা প্রয়োজন। (সময় টিভি ২৭-০৭-২০২৪)

[৮] রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য মতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে পোশাক রপ্তানি আয়ে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি থাকলেও মে মাসে রপ্তানি আয় কমে যায় ১৭ শতাংশের বেশি। মে মাসে পোশাক পণ্যের রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ৩৩৫ কোটি ৬৪ লাখ ডলার। যা আগের বছরের মে মাসে ছিলো ৪০৫ কোটি ৩২ লাখ ডলার।

[৯] বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, দ্রুততম সময়ের মধ্যে পোশাকশিল্পের আন্তর্জাতিক ক্রেতাদেরকে বাংলাদেশের পরিস্থিতি বুঝিয়ে ওয়ার্ক অর্ডারগুলো যতটা পারা যায় নহাল রাখতে হবে। সেই সঙ্গে ঘাটতি পোষাতে নতুন অর্ডার আনায় সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাতে হবে। তবে এই ধাক্কাটা আমাদের আমদানি-রপ্তানিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে। জিডিপির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ কঠিন হবে।

Share This

COMMENTS