সোমবার, ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ - (English Version)

দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ মহাসড়কের পিচঢালাই উঠে খানাখন্দের সৃষ্টি বাড়ছে দুঘর্টনা

দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ মহাসড়কের পিচঢালাই উঠে খানাখন্দের সৃষ্টি বাড়ছে দুঘর্টনা

আবু বকর, ভ্রাম্যমান প্রতিনিধি: দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ মহাসড়কটি সওজ ৩ বছর আগে ১০৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করে। এই মহাসড়কের ৬৬ কিলোমিটারের বিভিন্ন স্থানে ছোট ছোট গর্তের সৃষ্টি হয়েছে এখন।
বিরামপুর শহরের পূর্ব পাড়ার আসাদুজ্জান (৩৬) মোটরসাইকেলে করে বাড়িতে ফিরছিলেন। পেছন থেকে আসে দ্রুতগামী বাসের হর্ণ, বা দিকে ঘুরতেই মোটরসাইকেলের চাকা সড়কের উঁচু অংশে হোঁচট খায়। ফলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ছিটকে পড়েন আসাদুজ্জামান। অল্পের জন্য প্রাঁণে বেচে যান তিনি। সড়কের পিচঢালাই উঠে যাওয়ায় এবং দেবে উঁচু নিচু হয়ে যাওয়ায় আসাদুজ্জামানের মতো এই সড়কে প্রতিদিনই কেউ না কেউ দূঘর্টনার সম্মখীন হচ্ছেন।
বিরামপুর থানা সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১৬ জুন পর্যন্ত দিনাজপুর-এলাকায় পাঁচজন নিহত এবং দুই নারীসহ সাতজন আহত হয়েছেন।


সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) সূত্রে জানা গেছে, দিনাজপুর শহর থেকে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ পর্যন্ত এই সড়কের দৈর্ঘ্য ১০০ কিলোমিটার, প্রস্থ ৪২ ফুট। মহাসড়কটি ৮৮২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত। ১টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ২০১৮ সালে ১ জুলাই নির্মাণকাজ শুরু করে ৯টি গুচ্ছের মাধ্যমে ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর শেষ করে।
দিনাজপুর গোবিন্দগঞ্জ মহাসড়কের বিরামপুর ঢাকা মোড় থেকে গোবিন্দগঞ্জের চারমাথা পর্যন্ত ৬৬ কিলোমিটার সড়কের অবস্থা এখন বেশি খারাপ। এই মহাসড়ক নির্মাণের শুরুর দিকে এলাকার সাধারণ মানুষ এবং পরিবহন ব্যবসায় য্ক্তু ব্যক্তিরা অনেক খুশি হয়েছিলেন। কিন্তু নির্মাণের দুই বছরে মাথায় সড়কের পিচঢালাই উঠে উঁচু নিচু এবং কোথাও কোথাও দেবে যাওয়া শুরু করে। আবার কোথাও কোথাও বড় বড় গর্ত তৈরি হয়। এসব কারণে মহাসড়ক পথচারীদের জন্য অনেকটাই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, দিনাজপুর- গোবিন্দগঞ্জ মহাসড়কের ফুলবাড়ির ঢাকা মোড় থেকে দক্ষিণে আ¤্রবাটি মাদ্রাসা মোড়, লক্ষ্মীপুর বাজার থেকে জয়নগর বাজার, চন্ডিপুর বাজার থেকে দুর্গাপুর ঢিবি, বিরামপুর পৌর শহরের ঢাকা মোড়, মির্জাপুরের ব্র্যাক চিলিং সেন্টার থেকে ঘোড়াঘাট রেলঘুমটি পর্যন্ত কোথাও কোথাও সড়ক উঁচু হয়ে আছে। পিচঢালাই উঠে কোথাও কোথাও খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। এতে মহাসড়কের এসব স্থান দিয়ে আম্বুলেস, পণ্যবাহী পরিবহন, ইজিবাইক, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহনের চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ। সন্ধ্যার পর মহাসড়কের এসব এলাকা দিয়ে চলাচল করা আরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ, যত্রতত্র উঁচু হয়ে থাকায় এসব অংশ দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে মোটরসাইকেল উল্টে দূঘটর্না বেশি ঘটে। মহাসড়ক চার লেন হওয়াতে পরিবহনগুলো দ্রুতগতিতে ও নিরাপদে চলাচল করার কথা। কিন্তু সড়ক বেহাল হওয়ায় এসব যান এখন ধীরগতিতে চলাচল করে।
বিরামপুর থেকে ফুলবাড়ি শহরে নিয়মিত সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালান শাহিন আলী। তিনি বলেন, ‘বিরামপুর থেকে ফুলবাড়ি যেতে সড়কের অনেক জায়গায় তো রাস্তা উঁচু নিচ ও গর্ত হইচে। রাস্তায় বড় ট্রাক বা বাসকে সাইড দিতে গেলে তো ওই উঁচা অংশের উপরে গাড়ী তুলে দিতে হয়।’
মহাসড়কটির বিরামপুর উপজেলার অংশে দিনাজপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ অফিস থেকে দক্ষিণে বিরামপুর শহর হয়ে বিজুলবাজার পর্যন্ত প্রায় ১১ কিলোমিটার সড়কের কাজ করেছে আমিনুল ইসলাম প্রাইভেট লিমিটেড নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানের প্রকল্প পরিচালক সমীর কুমার বণিক বলেন, ‘সড়ক নির্মাণের কাজ শেষ হওয়ার পরবর্তী দুই বছর ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের জন্য ওই সড়কের সংস্কার করে দেওয়ার চুক্তি থাকে। দুই বছরের মধ্যে মহাসড়কে যেখানে যেখানে সমস্যা হয়েছিল, আমরা সেসব স্থান সংস্কার করেছি। এখন দুই বছর পার হয়েছে। আমাদের আর ওই কাজ করার সুযোগ নেই। ‘
দিনাজপুর সড়ক বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আমানউল্লাহ আমান বলেন, ‘মহাসড়ক নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। তবে কাজ শেষে সড়ক সংস্কারে প্রতিটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের জন্য তিন বছর ডিপিএল (ডিফেক্ট লায়াবিলিটি পিরিয়ড) থাকে। মহাসড়কে এ রকম কোনো সমস্যা থাকলে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সেই জায়গায় সংস্কারকাজ করার চেষ্টা করা হবে।’

Share This